কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার (৪ মে) দুপুরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান। পুলিশ সুপার বলেন, স্থানীয় একটি প্রতারক চক্র টার্গেট করে ভুক্তভোগী লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মো. মামুনকে (ছদ্মনাম)। একপর্যায়ে চক্রের সদস্য তরুণী তাসনুবার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে তাসনুবা ও প্রতারণার চক্রের আরেক সদস্য মোজাম্মেল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শারিরিক সম্পর্কের প্রলোভনে ভুক্তভোগীকে নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে প্রতারক তাসনুবা অম্লীল ও অনৈতিক কাজের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরে, ধারণকৃত ভিডিও চিত্রের ভয় দেখিয়ে তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে, ডিবি পরিচয়ে আগমন ঘটে প্রতারক চক্রের অপর দুই সদস্য আয়াত উল্লাহ ও আব্দুর রহিমের। তাদের সঙ্গে থাকে ইমরান হোসেন ও কবীর হোসেন। ভুক্তভোগীকে থানায় মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয় ভুক্তভোগীর কাছে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৭ টি খালি স্ট্যাম্পে ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরও গ্রহণ করা হয়। এতেও চক্রটি ক্ষান্ত না হয়ে ভিকটিমকে মামলায় জড়ানো ও প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত ৭ টি চেক ও নগদ ২ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে।পরবর্তীতে আরো ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দেওয়ার শর্তে ভুক্তভোগীকে ছেড়ে দেয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পরবর্তীতে চক্রের আরেক সদস্য মোজাম্মেল হক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শুরু করে ভুক্তভোগীকে নতুন করে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে ভুক্তভোগীর অনৈতিক ভিডিও দিয়ে “কাল সময়” নামক একটি মিডিয়ার নাম বলে নিউজ তৈরি করা হয়। উক্ত নিউজ ভুক্তভোগীর ছেলের মোবাইলে প্রেরণ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। ভুক্তভোগীর ছেলে বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমাণে প্রতারক চক্রকে নগদ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে সর্বমোট ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করে।
এই ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে শনিবার রাত দেড়টায় অভিযুক্ত সৈয়দ আয়াত উল্লাহ নামে একজনকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউন হল এর সামনে থেকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতারকৃত আসামীর দেওয়া তথ্যমতে মোজাম্মেল হক, মোঃ আবদুর রহিম, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, ইমরান হোসেন, কবির হোসেন ও তাসনুবা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে অলিখিত ৭টি স্ট্যাম্প, ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরিত ৭ টি চেক, চাঁদাবাজির নগদ ২৪ হাজার টাকা ও অপরাধে ব্যবহৃত ১টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুল হাসান রাফি, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।