ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি! Logo খাগড়াছড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ Logo সামনে ঘোর অন্ধকার-আমরা ঘুমাচ্ছি Logo খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বাষিকী পালিত Logo কিশোরগঞ্জে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল Logo হোসেনপুরে পুলিশের হাত থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল বিএনপি নেতারা Logo কিশোরগঞ্জ শহরে অটোরিকশার যানজট ও ফুটপাত দখল ভাঙতে মাঠে নামলেন ডিসি ফৌজিয়া খান Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে প্রবাস থেকে শোক প্রকাশ করলেন সেলিম রেজা Logo নলছিটিতে বিএনপির পক্ষে জনসংযোগ ও পথসভা করলেন এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেন

এমসি কলেজে গণধর্ষণ: আসামি রবিউল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চেরও সভাপতি

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৩:১০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১১০৬ বার পড়া হয়েছে

সিলেটের ১২৮ বছরের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এমসি কলেজ শাখারও সভাপতি। পাশাপাশি তিনি এমসি কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এছাড়া রবিউলের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারের ছবিও আছে। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ধর্ষণ মামলার আসামি সবাই রণজিৎ সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। এ ব্যাপারে জানতে রণজিৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুনঃ এমসি কলেজে গণধর্ষণ: ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় আ.লীগ নেতারা!

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার ৪২ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। এতে সভাপতি হিসেবে রবিউল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সোহেব মামুন নির্বাচিত হন।

এছাড়া কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয় ২৫ জনকে এবং যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে ১৫ জনকে, যা একটি সংগঠনের ক্ষেত্রে বিরল। একটি কলেজ শাখায় কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে এমন পদ-পদবি দেখা যায়নি স্বাভাবিকভাবে। ফলে এই কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই নানা অভিযোগ ছিল।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেটকারে এমসি কলেজে বেড়াতে যান সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এক গৃহবধূ। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা স্বামীসহ ওই তরুণীকে তুলে নেন কলেজ ছাত্রাবাসে। পরে তারা স্বামী-স্ত্রীকে বেঁধে মারধর করেন। পরে স্বামীর সামনে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন তারা। খবর পেয়ে এসএমপির শাহপরান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

পরে তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ। শনিবার সকালে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ছয়জনের নাম উল্লেখ আরও দু-তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এদিকে, শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ জানিয়েছে, এমসি কলেজে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো কমিটি দেয়া হয়নি। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নাম ব্যবহার করে এমসি কলেজে বিতর্কিতদের মাধ্যমে ভুয়া কমিটি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সঙ্গে বহিষ্কৃত অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিনের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তার দেয়া কোনো কমিটির বৈধতা নেই।

এরই মধ্যে গণধর্ষণের মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসান শনিবার বেলা ১১টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ আমি রবিউল হাসান। আমি এমসি কলেজের শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকে চেনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকে জানেন। শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের সঙ্গে কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে সংবাদ করিয়েছেন জানি না। আমি এমসি কলেজের ছাত্র। কিন্তু আমি হোস্টেলে কখনও ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করে বলছি, এই নির্মম গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে। যদি আমি এই জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত থাকি তাহলে প্রকাশ্যে আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। আমি কোনোভাবেই এই কাজের সঙ্গে জড়িত নই। সবার কাছে অনুরোধ করছি, সত্য না জেনে আমাকে এবং আমার প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের নামে অপপ্রচার করবেন না। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণকারী সব নরপশুকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

দুপুরে রবিউল হাসানের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বড় নগদীপুরে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দিরাই থানা পুুলিশের ওসি আশরাফুল ইসলাম অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গণধর্ষণে জড়িত রবিউলকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি আমরা।

এছাড়া সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও র‍্যাবকে নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনার জন্য সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া এবং র‍্যাব-৯ এর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এমসি কলেজে গণধর্ষণ: আসামি রবিউল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চেরও সভাপতি

আপডেট সময় : ০৩:১০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

সিলেটের ১২৮ বছরের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এমসি কলেজ শাখারও সভাপতি। পাশাপাশি তিনি এমসি কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এছাড়া রবিউলের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারের ছবিও আছে। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ধর্ষণ মামলার আসামি সবাই রণজিৎ সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। এ ব্যাপারে জানতে রণজিৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুনঃ এমসি কলেজে গণধর্ষণ: ঘটনা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় আ.লীগ নেতারা!

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার ৪২ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। এতে সভাপতি হিসেবে রবিউল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সোহেব মামুন নির্বাচিত হন।

এছাড়া কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয় ২৫ জনকে এবং যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে ১৫ জনকে, যা একটি সংগঠনের ক্ষেত্রে বিরল। একটি কলেজ শাখায় কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে এমন পদ-পদবি দেখা যায়নি স্বাভাবিকভাবে। ফলে এই কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই নানা অভিযোগ ছিল।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেটকারে এমসি কলেজে বেড়াতে যান সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এক গৃহবধূ। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা স্বামীসহ ওই তরুণীকে তুলে নেন কলেজ ছাত্রাবাসে। পরে তারা স্বামী-স্ত্রীকে বেঁধে মারধর করেন। পরে স্বামীর সামনে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন তারা। খবর পেয়ে এসএমপির শাহপরান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

পরে তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ। শনিবার সকালে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ছয়জনের নাম উল্লেখ আরও দু-তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এদিকে, শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ জানিয়েছে, এমসি কলেজে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো কমিটি দেয়া হয়নি। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নাম ব্যবহার করে এমসি কলেজে বিতর্কিতদের মাধ্যমে ভুয়া কমিটি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সঙ্গে বহিষ্কৃত অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিনের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তার দেয়া কোনো কমিটির বৈধতা নেই।

এরই মধ্যে গণধর্ষণের মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসান শনিবার বেলা ১১টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ আমি রবিউল হাসান। আমি এমসি কলেজের শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকে চেনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকে জানেন। শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের সঙ্গে কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে সংবাদ করিয়েছেন জানি না। আমি এমসি কলেজের ছাত্র। কিন্তু আমি হোস্টেলে কখনও ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করে বলছি, এই নির্মম গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে। যদি আমি এই জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত থাকি তাহলে প্রকাশ্যে আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। আমি কোনোভাবেই এই কাজের সঙ্গে জড়িত নই। সবার কাছে অনুরোধ করছি, সত্য না জেনে আমাকে এবং আমার প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের নামে অপপ্রচার করবেন না। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণকারী সব নরপশুকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

দুপুরে রবিউল হাসানের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বড় নগদীপুরে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দিরাই থানা পুুলিশের ওসি আশরাফুল ইসলাম অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গণধর্ষণে জড়িত রবিউলকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি আমরা।

এছাড়া সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও র‍্যাবকে নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনার জন্য সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া এবং র‍্যাব-৯ এর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।