DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ২৬শে এপ্রিল ২০২৪
ঢাকাশুক্রবার ২৬শে এপ্রিল ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

আদর্শ জীবনযাপনে আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব

DoinikAstha
এপ্রিল ৫, ২০২১ ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

পবিত্র কোরআনে আত্মশুদ্ধির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আত্মশুদ্ধির অর্থ অন্তরকে পবিত্র করা। অর্থাৎ অন্তর থেকে সব ধরনের মন্দ স্বভাব দূর করে ভালো ও উত্তম গুণসমূহ দ্বারা অন্তরকে সজ্জিত করা। অন্তরের মন্দ স্বভাব হচ্ছে কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, অহংকার, রিয়া-লোক দেখানো প্রবণতা, কৃপণতা, কুধারণা প্রভৃতি।

অন্তরের উত্তম গুণ হচ্ছে ইখলাছ, সবুর, শোকর, আত্মসংযম, আল্লাহভীতি, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল, আল্লাহর ভালোবাসা, বদান্যতা, নম্রতা, ভদ্রতা, সততা ইত্যাদি। মোটকথা, আত্মশুদ্ধির দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত আত্মার ময়লা পরিষ্কার করা। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় মন্দ অভ্যাসগুলো সংশোধন করা। দ্বিতীয়ত পছন্দনীয় গুণাবলি অর্জনের দ্বারা আত্মিক উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আত্মার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।

আত্মশুদ্ধি কেন প্রয়োজন
মানুষকে আল্লাহ তায়ালা দুটি জিনিস দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। দেহ এবং আত্মা। এ দুটি জিনিস সুস্থ থাকলেই একজন মানুষকে পরিপূর্ণ সুস্থ মানুষ বলা হবে। মানুষের যেরূপ দৈহিক রোগব্যাধি রয়েছে, তেমনি আছে আত্মিক রোগব্যাধি। দৈহিক রোগব্যাধির জন্য আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করি, ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। আত্মিক রোগব্যাধির চিকিৎসা গ্রহণের জন্যও আত্মার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অপরিহার্য। আত্মার সুস্থতার উপরই তো দেহের সুস্থতা নির্ভর। অর্থাৎ দেহ দ্বারা সম্পাদিত প্রতিটি কাজকর্ম মানবতার পক্ষে কল্যাণকর প্রতিপন্ন হবে যদি আত্মা সুস্থ থাকে।

আত্মা অসুস্থ হলে হাত, পা, জবান প্রভৃতি অঙ্গ হিংস্র জীব-জানোয়ারের মতো মানুষ কষ্ট দিয়ে বেড়াবে। তাই আত্মাকে বলা হয় দেহের চালক। মানবদেহকে আত্মাই পরিচালিত করে। নেশাগ্রস্ত মাতাল চালক যেমন একাই ধ্বংস হয় না বরং গাড়ির আরোহীদেরসহ আরও অনেককে ধ্বংস করে, তদ্রুপ কল্যাণের জন্য নিবেদিত মানুষ আত্মিক রোগে আক্রান্ত হলে শুধু নিজে নয়; সমাজও ধ্বংস করবে। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাকিদ প্রদান করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা কোনো কথা বলতে এত কসম করেননি, যত কসম করেছেন আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে। সুরা আশ শামসে তিনি সাতটি জিনিসের কসম করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে সেই সফলকাম। আর যে নিজেকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ মনোরথ।’অর্থাৎ মানব জীবনের চূড়ান্ত সফলতা সেই লাভ করবে যার আত্মা পরিশুদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরিশুদ্ধ করার নিমিত্তে যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন অগণিত নবী-রাসূল। আমাদের প্রিয়নবি সা. এর আগমনের চারটি উদ্দেশ্যের কথা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। যার দ্বিতীয়টি হলো, তিনি মানুষকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করবেন।

তিনি মাত্র তেইশ বছরের স্বল্প সময়ে মানবাত্মার যথার্থ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করেছিলেন। আইন প্রণয়ন আর আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে নয় বরং তিনি আত্মার পরিশুদ্ধিতার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘শোন, মানবদেহে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে। সেটা সুস্থ থাকলে সারা দেহ সুস্থ থাকে আর সেটা খারাপ হয়ে গেলে সারা দেহ খারাপ হয়ে যায়। শুনে রাখ, সেই মাংসপিণ্ড হচ্ছে অন্তরাত্মা।’ (ইবনে হিব্বান : ২৯৭)
এই হাদিসে রাসুলে করিম (সা.) পুরো দেহের আমলের ইসলাহ ও সংশোধনকে আত্মার সংশোধনের ওপর নির্ভরশীল বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা যাপিত জীবনে ভালো-মন্দ যা কিছু করি প্রথমে সেই কাজের ইচ্ছাটা অন্তরে সৃষ্টি হয়। এরপর কর্মের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সুতরাং অন্তর পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হলে সেখান থেকে ভালো ও মঙ্গলজনক ইচ্ছাই উৎসারিত হবে। আর অন্তর কলুষিত হলে তার ইচ্ছাগুলোও খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। তাই অন্তরকে পবিত্র করা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।

আরো পড়ুন :  গাছ আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত

আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে আত্মশুদ্ধি
মানবজাতির সমাজ সভ্যতা ও আত্মিক পবিত্রতার জন্য নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এ গ্রন্থের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনের পথ ও পদ্ধতি। শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহকে সা. যে কর্মপদ্ধতি দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল তা আল্লাহ পাক নিজেই বর্ণনা করেছেন পবিত্র কোরআনে। তিনি বলেন, ‘তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করবেন তার আয়াত। তাদের পবিত্র করবেন এবং শিক্ষা দেবেন কিতাব ও হিকমত। এর আগে তারা ছিল পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।’ (সুরা জুমা : ২)

আয়াতে বর্ণিত চারটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মহানবী (সা.) আরব সমাজ থেকে সকল প্রকার অন্যায়-অনাচার দূরীভূত করে একটি আদর্শ সোনালী সমাজ উপহার দিয়েছিলেন। আমাদের বর্তমান সমাজচিত্রের দিকে তাকালে আরবে সেই জাহেলিয়াতের দৃশ্যই চোখে পড়ে। বরং বর্তমানে এমন সব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা আরবের জাহেলি যুগে ছিল না। শিশু ধর্ষণের মতো লোমহর্ষক ঘটনা অহরহ ঘটছে বাংলাদেশে। ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করার মতো অমানবিকতা কি সেই বর্বর যুগেও কল্পনা করা গেছে? সুদ, ঘুষ, র্দুর্নীতি, চাঁদাবাজি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। গুম, খুন, ছিনতাই, অপহরণ নিত্যদিনের চিত্র।

জিনা-ব্যভিচার, মিথ্যা, প্রতারণা, স্বার্থপরতা, কপটতা, অসততা, বিশ্বাস ঘাতকতা সমাজের হাল-চাল। ঘুণে ধরা এই সমাজকে সংস্কার করতে হলে নববী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। অর্থাৎ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শিক্ষা সমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করা, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সুন্নতে রাসূলের অনুসরণ করা এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই সম্ভব একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল, শান্তিময়, কল্যাণকর সমাজ উপহার দেয়া।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:০৮
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:২৮
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩
  • ১২:০০
  • ৪:৩১
  • ৬:২৮
  • ৭:৪৭
  • ৫:২৮