DoinikAstha Epaper Version
ঢাকামঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল ২০২৪
ঢাকামঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফরিদপুরে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা. অগ্নি সংযোগ. সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশের মাইকিং

mhelias 5780
মার্চ ৩১, ২০২২ ১১:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ফরিদপুরে বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা. অগ্নি সংযোগ. সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশের মাইকিং

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এটিএম ফরহাদ নান্নু’র বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট এবং একই গ্রামের অন্য ২টি বাড়িতে আগুনসহ ৮টি বাড়িতে ব্যাপক তান্ডব চালানো ঘটনা ঘটেছে। ফের এ সংঘর্ষ যাতে সংঘটিত না ঘটে সে লক্ষে ভাঙ্গা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ব্যবহৃত সকল দেশীয় অস্ত্র থানায় অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানাযায়, বিষয়টি ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নজরে দেওয়া হলেও প্রশাসনের বিশেষ নজরদারী না থাকায় মঙ্গলবার ভোরে সোনাখোলা ও বালিয়াচরা গ্রামের শত শত গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সড়কি, রাম দা, বল্লম, টেটা, ছুড়ি, চাপাতি, লাঠি সোঠা নিয়ে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চালায়। একটি পর্যায়ে পরিস্থিতি ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও সোনা খোলা গ্রামের লোকজন তাদের পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে ভাড়া করে এনে বালিয়াচরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক তান্ডব চালায়।

এসময় নারী-পুরুষ, শিশুরা নিজেদের ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে চিৎকার শোরগোলে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায়। সংঘাতের একটি পর্যায়ে ৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাংবাদিক নেতা, আকাশ মুন্সী, আ. হান্নান, জাফর, সিরাজ শেখ, নুরু কাজী, আঃ গফফার, হাবিল, কাউসার, মিজানুর মুন্সীর বাড়িতে হামলা তান্ডব ভাংচুর চালায়।

অগ্নিসংযোগ করার পাশাপাশি ঘরের মালামাল লুটের অভিযোগ এনে আব্দুল গফফার সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারীরা তার ঘরের মালামাল ভাংচুর ও ছোট মেয়ের বিবাহের স্বণালংকার লুটপাটসহ মার্কসীট, আইডি নিয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ বইলা পুলিশের কাছে বিচার পাবো না?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলগী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নেতা এ. টি. এম ফরহাদ নান্নু’র বাড়িসহ নয়টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, তান্ডবের আলামত পাওয়া যায়। ক্ষেতের অনেক রবিসশ্য, মরিচ, কুমড়ো, লাউ, পিয়াজ, পুঁইশাক, ডাটা, টমেটো, কলাগাছ ইত্যাদি বিনষ্ট, গম ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে পুরানো, পাওয়ার ট্রিলার, স্যালোমেশিন, জমিতে পানি দেওয়ার মোটা হর্স পাইপ -চিকন ফিতা কুপিয়ে বিনষ্ট করার আলামত পাওয়া যায়।

হতদরিদ্র আব্দুল গফফার, হাবিল, কাউসার মুন্সী, ভুলু মুন্সীসহ একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ হ্যান্ড মাইকিংয়ে নিষেধ করার পরে আমাদের গ্রামের (বালিয়াচরা) লোকজন সংঘর্ষ থেকে বিরত হয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যায়। এই সুযোগে আমাগো গ্রামে হামলা, তান্ডব, ভাংচুর, ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে সর্ব শেষে দুটি বাড়িতে পাটখড়ির রান্নাঘরসহ দুইটি খড়ির মটে আগুন লাগিয়ে দেয় সোনাখোলা গ্রামের সন্ত্রাসী লোকজন।

গাফফারের বড় মেয়ে জানান, আমার ছোট বোনের বিবাহ ঠিক হওয়ায় বোনের জন্য নতুন দুই ভরি স্বর্নালংকার, হাতের ঘড়ি, পায়ের দুল এসএসসি, এইচএসসি মার্কসীট, পরিবারের অন্যদের ৩টি এনআইডি কার্ড, আমার ভাইয়ের সার্টিফিকেট সহ সব দলিলপত্র নিয়ে যায় সোনাখোলা গ্রামের লোক। আমরা গরীব বলে আমরা কী বিচার পাবো না! আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দোষীদের বিচার চাই।

জাহাঙ্গীর মুন্সী বলেন, আমার পাওয়ার ট্রাক কুপিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, প্রায় চার ঘন্টা যাবত দু গ্রামের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। সংঘর্ষ বন্ধে পুলিশ যে সময় হ্যান্ড মাইকিং করে, বালিয়াচরা গ্রামবাসী তখন শান্ত হয়ে ফিরে যেতে থাকে। আর ঐ দিকে শরীফ, শওকত, আয়নাল, নজরুল শিকারী, জাহাঙ্গীর মাতুব্বর, জব্বার, কটন মাতুব্বর, বাকা মাতুব্বর, আলম প্রমুখ লোকদের উষ্কানিতে সোনাখোলা গ্রামের লোকজন পুনরায় বালিয়াচরা গ্রামের ৮টি বাড়ির উপর ঝাঁপিয়ে পরে ব্যাপক তান্ডব চালায়। সংঘর্ষে, জালাল শেখ, সালেহা, লতিফা বেগম, খোকন মুন্সি, রাজ্জাক শেখ সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।

জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন মোল্লা সাংবাদিকদেরকে বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রামের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়। তারপরেও তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় দু গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। আমি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য হয়েও আমার বিভিন্ন ফসল এমনকি বাড়িটি রক্ষার্থে পুলিশি কোন সাহায্য পাই নাই। প্রথমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে এরপরে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে তখন ফরিদপুর এসপি মহোদয় স্যারকে ফোনে অবগত করি। তখন এসপি স্যার বলেন, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এরপরে জেলা সদর থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। থানা থেকে বলা হয় পুলিশের সংখ্যা কম, তাই ভাঙ্গা থানার মতো এতো বড় এলাকা ও ব্যস্ততম থানার জন্য পুলিশ সদস্যের সংখ্যা আরো বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে আলগী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এ. টি. এম ফরহাদ নান্নুর বাড়িতে হামলা করায় তীব্র নিন্দ, প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভাঙ্গা উপজেলা শাখা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

বুধবার (৩০মার্চ) বিকেলে ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান ঘটনা স্থলে গিয়ে সংঘর্ষে ক্ষতি গ্রস্থদের ক্ষতি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ সেলিম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরবর্তীতে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে ভাঙ্গা থানা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহিমা কাদের চৌধুরী স্যার গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।

উল্লেখ্য, আলগী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাউসার ভূঁইয়া এবং বালিয়াচরা গ্রামের আবু সামা দ্বয়ের একটি জমির উপর বালিয়াচরা গ্রামের ছেলেরা ক্রিকেট খেলতো। সেখানে সোনাখোলা গ্রামের ছেলেরা খেলাধুলায় বাধা প্রদান করে। এ নিয়ে সোনাখোলা গ্রামের সাওন, মাহবুব, মেহেদী, তানভির, ফয়সাল মিরান বালিয়াচরা গ্রামের মিরাজ, আলামিন, সাঈদ ও নাঈমকে মারধর করলে তারা গুরুতর আহত হয়।

আরো পড়ুন :  কিশোরগঞ্জের ইটনায় বিশ কেজি গাঁজাসহ আটক ১

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:১২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:২৬
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৭
  • ১২:০১
  • ৪:৩০
  • ৬:২৬
  • ৭:৪৩
  • ৫:৩৩