বীর মুক্তিযোদ্ধা রণবিক্রম ত্রিপুরা (তাতু)
স্টাফ রিপোর্টারঃ
রণবিক্রম ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সাবেক অন্যতম সদস্য, বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর জাতীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বাধিক উচ্চারিত ও পরিচিত একটি মুখ।
১৯৬৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ৭১ এর পহেলা মার্চ সারা বাংলাদেশে ছাত্র লীগের নেতৃত্বে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে তিনি সেই সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে ২৫ মার্চ সরাসরি মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরবর্তী ১৯৭২ সালে অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা(রাঙ্গামাটি) যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন।
১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু কে স্ব-পরিবারে হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিনাবিচারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪ বছর কারাবরণ করেন।
অসাম্প্রদায়িক ও নিপীড়নবিহীন একটি দেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও বিভিন্ন জাতিসত্তার স্বকীয় অস্তিত্ব মর্যাদার সাথে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি থেকে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
২৫ মার্চের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্রোহী ই,পি,আর,ইউনিট ও বেঙ্গল রেজিমেণ্ট থেকে পালিয়ে আসা সৈনিকদের রসদ সরবরাহ করার কাজে এবং তদানিন্তন পার্বত্য চট্টগ্রামের ততকালীন ডেপুটি কমিশনার জনাব এইচ,টি, ইমাম এর তত্তাবধানে তাদেরকে সংগঠিত করতে সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন রণবিক্রম ত্রিপুরা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপনে তিনি সরাসরি অংশ নেন।
এই ক্যাম্পটিই পরবর্তীতে ১ নং সেক্টর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তিনি সেখানে আব্দুল মান্নান, মোশাররফ হোসেন, এসএম ইউসুফ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, মহিউদ্দীন চৌধুরী, খাজু মিয়া প্রমুখদের সাথে কাজ করেন। এই ক্যাম্পে ক্যাপ্টেন এনাম, মেজর জিয়া ও মেজর রফিকও ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রণবিক্রম ত্রিপুরা ভারতের দেরাদুনে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন এবং প্রশিক্ষণ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়, মানিকছড়ি, গাড়িটানা, যোগ্যাছোলা, ডাইনছড়ি, বাটনাতলী ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকায় পাক-হানাদার বাহিনী ও রাজারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি যুদ্ধের শেষের দিকে বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট (BLF) পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার কমান্ডার পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
রণবিক্রম ত্রিপুরা বলেন, “যে বিস্তীর্ন অঞ্চলে আমি পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, সেখানকার অধিবাসীরা বিশেষ করে ত্রিপুরা ও মারমা জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তাদের মাঝে আমি মুক্ত স্বদেশভূমির জন্যে উচ্ছ্বসিত আকাঙ্খা প্রত্যক্ষ করেছি।” অথচ স্বাধীনতার ৫২ বছর পারেও এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর অবদানের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি পাননি!
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায়, কিন্তু হাইব্রিডদের ভিড়ে রণ বিক্রম ত্রিপুরা’র মতো বীর মুক্তিযোদ্ধারা আড়ালে চলে গেছে। আজ ” মহান স্বাধীনতা দিবস “। আজকের এই দিনে রণ বিক্রম ত্রিপুরা সহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।