মোঃ ফরিদ হোসাইন মাসুম ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ঘর পোড়ানোর মামলা থেকে বাঁচতে ‘অলৌকিক আগুনের নাটক’ সাজিয়ে মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা গুজব ছড়িয়ে অলৌকিক আগুনের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকরাম আলী বলেন, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। গত ২৯ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী থানায় সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামসুজ্জোহা, এহেতাসাম উল্লাহ, মকসেদুল ইসলাম, ইন্তাজ আলী, দেলোয়ার হোসেন, কফিল উদ্দীন, ওবায়দুল্লাহ, তহিদুর রহমান, আজিম উদ্দীন চৌধুরী, মন্টু আলম, মেহেরুন নেছা ও বিলকিস আক্তার। তাদের বয়স ৩১ বছর থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে।
মামলার বরাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আকরাম আলী বলেন, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সালেহা বেগমের স্বামী মকবুল হোসেনের মৃত্যু হয়। এরপর গ্রামের কিছু মানুষ মকবুল হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার গুজব রটায় এবং বাদীর পরিবারের লোকজনকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে। চলতি বছরের ২৮ মার্চ কে বা কারা সালেহা বেগমের চারটি গোয়ালঘর ও দুই বিঘা জমির গমে আগুন দেয়। ৬ এপ্রিল সালেহার চাচা সিরাজ উদ্দীনের খড় রাখার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে বাদীর পরিবারের পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, গত ৮ এপ্রিল দুপুরে প্রতিবেশী ইনতাজ আলীর বাড়ির কাপড় কাঁচার বালতিতে আগুন ধরে- এমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাদী ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন গ্রামের কয়েকজন মানুষ। তবে গ্রামবাসীর কছে বিষয়গুলো নিয়ে বাদী কথা বললে তারা এই গুজবের সত্যতা দেখাতে পারেনি। এসব ঘটনার পরে ২৯ এপ্রিল সালেহা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়রা জানান, ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে ‘প্রতিদিন অলৌকিক আগুনের’ ঘটনা ঘটছে। প্রায় একমাস আগে হঠাৎ করে দিনের বেলা গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের খড়ের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে আগুন নেভায়। ওই সময় গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের বাড়িতে খড় সংরক্ষণের ঘরেও আগুন লাগে। আবারও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, কয়েক দিন পর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন, ও আব্দুস সালামের বাড়ির খড়ে আগুন লাগে। এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, মকসেদুল ইসলাম, মুরাদ হোসেন, মো. সাইফুল্লাহ ও নাঈম হোসেনের মধ্যে কারও না কারও খড়ের গাদা, ঘরের বারান্দা ও ঘরের ভেতরে থাকা খাট, তোষক, আলনা, আলনায় থাকা শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ও ঘরে রাখা গমের বস্তা, সারের বস্তা, খাবারের কনটেইনারসহ আসবাবপত্রে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গ্রামের মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন অলৌকিকভাবে জীনেরা গ্রামের যেখানে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের দাবি, পারিবারিক শত্রুতার কারণে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আকরাম আলী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহ হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ জনকে আটক করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য তদেরকে সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলা থেকে বাঁচতে গ্রামে অলৌকিক আগুনের সাজানো নাটক সাজানো হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা এবং সালেহা বেগমের জমি দখল করা।
এদিকে আজ রোববার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতদের ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকরাম আলী। তিনি বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করলে ও মামলাটি তদন্ত শেষে হলে আরও অনেক রহস্য বেড়িয়ে আসতে পারে।
কোর্ট ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফুর রহমান গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সেঙ্গ আসামিদের রিমান্ডের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের বিষয়ে ৬ মে শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে।