DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ১৮ই জুলাই ২০২৫
ঢাকাশুক্রবার ১৮ই জুলাই ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে?

Doinik Astha
জুন ১৬, ২০২৫ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ইরান ও ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুব বেশি নেই। তবে এই দুদেশের সংঘাত পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। আর সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিন খাতে প্রভাব পড়বে।

প্রথমত, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সব খাতে প্রভাব পড়বে। দ্বিতীয়ত, প্রভাব ফেলবে বৈদেশিক শ্রমবাজারে। তৃতীয়ত, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে জ্বালানি খাতসহ পুরো আমদানি পণ্য সরবরাহে প্রভাব পড়বে।

গত শুক্রবার রাতে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। জবাবে পালটা হামলা শুরু করেছে ইরান। ইতোমধ্যে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এই হরমুজ প্রণালি একটি সরু জলপথ, যা পশ্চিমের পারস্য উপসাগরকে পূর্বে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এই পথ ইরানের নিয়ন্ত্রণে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খনিজ তেলবাহী জাহাজ যাতায়াতের এটিই একমাত্র পথ। এছাড়া এটি বন্ধ হলে সব ধরনের আমদানিতে প্রভাব ফেলবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশই তিন ধরনের পণ্যে। এর মধ্যে রয়েছে— জ্বালানি তেল, খাদ্য এবং সার। এই পণ্যগুলোর অধিকাংশই হরমুজ প্রণালি দিয়ে আমদানি হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য খুব সামান্য।

২০০৬ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ও ইরান একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এরপরও সম্পর্ক খুব বেশি এগোয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আবর, সংযুক্ত আবর আমিরাত, কাতার এবং ওমানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে। ফলে মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এ প্রসঙ্গে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তবে এই যুদ্ধ শুধু দুদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইতোমধ্যে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে এই যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এই প্রভাবের গভীরতা নির্ভর করবে, যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ স্থায়ী হয় তার ওপর।

তিনি বলেন, এখানে কয়েকটি শঙ্কা আছে। প্রথমত, বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এসব জ্বালানি মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হয়। এর মধ্যে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) এবং ক্রুড অয়েল (অশোধিত তেল) অন্যতম। দ্বিতীয় বিষয় হলো, শ্রমবাজার। বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে। গত কয়েক মাসে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, এতে বড় কৃতিত্ব রেমিট্যান্সের (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ)। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হলে রেমিট্যান্স কমবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত করবে। তৃতীয়ত, ইতোমধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে ইরান। এটি বন্ধ হলে তেল সরবরাহে প্রভাব পড়বে। এর ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে। বাড়বে পরিবহন ভাড়া, পণ্যের উৎপাদন খরচ। মূল্যস্ফীতিতেও প্রভাব ফেলবে। এছাড়া সরকার জ্বালানি তেলের যে মূল্য সমন্বয়ের চেষ্টা করছে, সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে যুদ্ধ কতদিন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার ওপর।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইরান ও ইসরাইল দুদেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সরাসরি খুব বেশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। ইসরায়েলের সঙ্গে একেবারেই নেই। ইরানের সঙ্গে কিছুটা আছে। তবে সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক, যুদ্ধ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবে। যেহেতু বাংলাদেশ জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। দেশে আমদানি পণ্যের অধিকাংশই জ্বালানি তেল, তাই পণ্যটির দাম বাড়লে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, শ্রমবাজার। এখানে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ইসরায়েলে বাংলাদেশের শ্রমিক না থাকলেও ইরানে কিছু আছে। তবে এই দুই খাতেই সরাসরি প্রভাবের আশঙ্কা কম।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
[prayer_time]