DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল ২০২৪
ঢাকাবৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ছোট বয়সের সুশিক্ষা মানুষের সারা জীবনের সেরা পাথেয়

News Editor
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০ ৮:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ছোট বয়সের সুশিক্ষা প্রতিটি মানুষের সারা জীবনের সেরা পাথেয়। প্রত্যেক মানুষ সাধারণত মায়ের কাছ থেকে এ শিক্ষা বেশি পেয়ে থাকে। এ কারণেই প্রত্যেক মায়ের কোলকে শিশুদের জন্য প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। মায়েদের পাশাপাশি বাবা, বড় ভাই-বোন ও শিক্ষকরা তাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের এ শিক্ষা দেন, যা প্রতিটি মানুষের সারা জীবনের জন্য সেরা পাথেয়।

এ সম্পর্কে হাদিসের ছোট্ট একটি বর্ণনা উল্লেখ করার মতো। সাহাবি হজরত ওমর ইবনে আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনের ছোটবেলার একটি ঘটনা। কীভাবে খাবার খেতে হয়, তা তিনি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিখেছিলেন, যা তিনি সারা জীবন পালন করেছিলেন। হাদিসে পাকে তিনি বর্ণনা করেন-

হজরত ওমর ইবনে আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তত্ত্বাবধানে ছিলাম। আমি ছিলাম ছোট্ট বালক। একদিন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে খাবার খাচ্ছিলাম। আমার হাত (খাবারের) পাত্রের এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল। তা দেখে প্রিয় নবি (আমাকে খাওয়ার আদব শেখালেন) বললেন, হে বৎস! বিসমিল্লাহ বল। ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছ থেকে খাও।

আরও পড়ুন : আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করা কি বৈধ?

হজরত ওমর ইবনে আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তা শেখানোর পর থেকে সারা জীবন আমি ওভাবেই খেয়েছি।’ (বুখারি, মুসলিম)

ছোট্ট ওমর ইবনে আবি সালামাকে জীবনের শুরুর দিকে মাত্র একবার শিখিয়েছিলেন আর তিনি সারাজীবন তা মেনে চলেছেন। তা ছিল তার জীবনের সেরা পাথেয়।

তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি ভাবলে চলবে না যে-
বয়স অল্প, ছোট্ট মানুষ; বড় হলে সব কিছুই ঠিকঠাক হয়ে যাবে। এ চিন্তার ফলেই বড় বয়সে এসে মানুষ নীতি-নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যায়। ছোট বয়সে যদি সঠিক শিক্ষা না পায় তবে বড় হলে ভালো শিক্ষা গ্রহণ করার মানসিকতাও লোপ পায়। যে কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ সুশিক্ষার সফলতার শিখরে পৌঁছতে পারে না।

হাদিস থেকে যে বিশেষটি শিক্ষণীয়-
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট্ট সাহাবি হজরত ওমর ইবনে আবি সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওভাবে (খাবার) খেতে দেখে এটা ভাবেননি যে, সে তো ছোট্ট বালক, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। তিনি তা না ভেবে বরং তাকে খাবারের বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনিও সারাজীবন তা মেনে চলেছেন।

কোনো শিশুসন্তান যদি কোনো মা-বাবা, বড় ভাইবোন বা শিক্ষকের সামনে খাবার গ্রহণের সময় হাত পরিষ্কার না করে বাঁ হাতে খাবার শুরু করে, তবে মা-বাবা, বড় ভাইবোন বা শিক্ষক যদি খাবার গ্রহণের বিষয়গুলো জানেন তবে তাঁরা শিশুকে হাত ধোয়াবেন, বিসমিল্লাহ বলার উপদেশ দেবেন, ডান হাতে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেবেন।

আমাদের সমাজে সাধারণত আমরা দেখি যে, অনেক মা শিশুকে খাবার খাওয়ানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার খাওয়াচ্ছে। তার মানে শিশু স্বাভাবিকভাবেই সে খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ বলে খাবার খাওয়ার শিক্ষা পাচ্ছে। আবার নিজ হাতে খাবার খাওয়ার সময় ডান হাতে খাওয়ার শিক্ষা পাচ্ছে। এ শিশু কখনো বাঁ হাতে খাবার খাবে না।

এভাবে পোশাক পরার সময় ডান দিক থেকে অভ্যস্ত হবে। কাউকে দেখলে সালাম বিনিময়ের শিক্ষা পেলে তা সারাজীবন চলতে থাকবে। মা-বাবা নামাজি হলে ছোট বয়স থেকেই শিশুরা বাবা-মার সঙ্গে নামাজে অভ্যস্ত হবে। ছোট্ট বয়সে এ হলো শিশুর মৌলিক শিক্ষা। শিশুসন্তানের যা সারা জীবনের জন্য সেরা পাথেয়।

এ কারণেই সাত বছর বয়সের শিশুদের নামাজের প্রতি অভ্যস্ত করার বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাগিদ দিয়েছেন। সাত বছর বয়স তো শিশু বয়সই। এ সময়টাই তো শিশুর নামাজে অভ্যস্ত হওয়া এবং তা শেখার বয়স। এ বয়সে মা-বাবা নামাজসহ অভ্যাস গঠন, আদব-আখলাক, দুনিয়া ও আখেরাতমুখী শিক্ষার প্রতি যত্নবান হলে তা হবে শিশুর জন্য সারা জীবনের সেরা পাথেয়।

এমন অনেক শিশু ছেলে-মেয়ে আছে, যারা দু-তিন বছর বয়সেই ঠিক মতো হাঁটতে পারে না, কিন্তু নামাজের বিছানা নিয়ে টানাটানি করে। নিজের জন্য আলাদা নামাজের বিছানা খুঁজে বের করে। অতপর তার ওপর সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। মা-বাবা ও পরিবারের অন্যদের দেখে দেখে শেখা। অথচ সে বয়সে সুরা-কেরাতসহ নামাজের কোনো বিষয়ই তার জানা থাকে না।

এমনিভাবে শিশু বয়সে মা-বাবা, বড় ভাইবোন, দায়িত্বশীল শিক্ষক কিংবা অভিভাবক যদি নিজেরা নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে করে তবে ছোট ছোট শিশুরাও সে অভ্যাসে বড় হয়ে উঠবে। তা হবে তাদের জন্য জীবনের সেরা পাথেয়।

সুতরাং প্রত্যেক মানুষের সারা জীবনের সেরা পাথেয় লাভের অন্যতম উপায় পারিবারিক সুশিক্ষা গ্রহণ করা। যেখানে পরিবারের সদস্যদের হতে হবে ইসলাম প্রিয় ও দ্বীনদার। তবেই সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনের পাথেয় গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

মুমিন মুসলমানের উচিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি দিক ও আদর্শকে নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। সে মতে নিজেদের পরিচালিত করা এবং পরিবারের ছোট ছোট সদস্যদের সেভাবে শিক্ষা দেয়া। আর তাই হবে তাদের সারা জীবনের সেরা পাথেয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক উপদেশ ও কাজের মাধ্যমে ছোট ছোট শিশুদের সারা জীবনের সেরা পাথেয় হিসেবে যথাযথ শিক্ষা প্রদানের তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:০৮
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:২৮
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:১৩
  • ১২:০০
  • ৪:৩১
  • ৬:২৮
  • ৭:৪৭
  • ৫:২৮